ঝালজাতীয় খাবারের অধিক্য থাকলেও শরবতসহ মিষ্টিজাতীয় আইটেমও কম থাকে না ইফতারির পসরায়। চিনি ছাড়া লেবুর শরবতেও মজা পান না অনেকে। বাসা-বাড়ি কিংবা রেস্তোরাঁয় ফলের জুস, ফালুদা, চিঁড়ার গুঁড়ার শরবত, দই, পিঠা, পায়েস, জিলাপি, সেমাই, হালুয়াসহ নানা রকম মিষ্টিজাতীয় আইটেম দেখা যায় ইফতারির পসরায়। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের অনেককে বিপাকে পড়তে হয় ইফতারের সময়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাঁরা রোজা রাখেন তাঁদের অবশ্য এখন আর মন খারাপ করার কারণ নেই। ঘরে কিংবা দোকানে চাইলেই এখন পাওয়া যায় ‘সুগার ফ্রি’ বিভিন্ন পণ্য।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এবার ঢাকার অনেক রেস্তোরাঁয় ইফতারি পণ্যের পসরায় থাকছে সুগার ফ্রি জিলাপি, সুগার ফ্রি দই, দইবড়া, সন্দেশ, বুড়িন্দা, পায়েস, পিঠা, হালুয়া, জুসসহ নানা আইটেম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর ডিসিসি মার্কেটের কাছেই সুগার ফ্রি জিলাপি কেনার ভিড় দেখা যায় একটি অস্থায়ী ইফতারসামগ্রী বিক্রির দোকানে। একই দোকানে সুগার ফ্রি পাটিসাপটা পিঠা, দইবড়া আর বুরিন্দারও দেখা মেলে।
অনলাইনভিত্তিক বেশ কিছু খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও আগেভাগে অর্ডার দিলে গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে সুগার ফ্রি নানা আইটেম সরবরাহ করে থাকে ইফতার আইটেম হিসেবে। বড় কয়েকটি হোটেল সংযুক্ত রেস্তোরাঁয় ইফতারির আইটেমের মধ্যেও কিছু থাকে ডায়াবেটিক রোগীর উপযোগী।
ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কে একটি দোকানে সুগার ফ্রি জিলাপি পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্যান্ডের প্রায় সব মিষ্টির দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে সুগার ফ্রি মিষ্টি, সন্দেশ, হালুয়াসহ বিভিন্ন আইটেম। এ ছাড়া সুগার ফ্রি জুস তো মিলছে প্রায় সব চেইনশপেই।
গুলশানে ক্রেতা মোকাররম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু রোজাও রাখছি। কষ্ট হচ্ছে তবু ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারেই নিয়মমতো ইফতারের পর আর সেহরির সময় ওষুধও চালিয়ে যাচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই মিষ্টি খুব পছন্দ করি। ইফতারে মিষ্টি না খেলে মনে হতো ইফতারই হয় না। তাই এখন লোভ কিছুটা সামলে মিষ্টির আইটেমগুলোকে সুগার ফ্রি প্রক্রিয়ায় খেয়ে নিচ্ছি। তাতে অন্তত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো হচ্ছে। শরীরেরও ক্ষতি হচ্ছে না। কারণ সুগার ফ্রি আইটেমগুলো সাধারণত তুলনামূলক বিশুদ্ধই হয়ে থাকে।’
আরেক ক্রেতা শাহিনা আক্তার বলেন, ‘জিলাপি ছাড়া তো কখনো ইফতারের কথা চিন্তা করা যায় না। আর বাসায় সুগার ফ্রি জিলাপি বানানো মুশকিল। তাই যেখানেই সুগার ফ্রি জিলাপির খোঁজ পাই সেখানেই ছুটে যাই তা কেনার জন্য।’
কামরুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, ‘বয়স্ক বাবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তিনি রোজা রাখতে পারেন না। কিন্তু ইফতারের সময় বাসার সবাই এক টেবিলে বসে ইফতার করে থাকি। আমরা মিষ্টি জাতীয় নানা আইটেম খাই, কিন্তু বাবা তা খেতে পারেন না। তাই প্রতিদিনই তাঁর জন্য ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের সুগার ফ্রি আইটেম কিনে বাসায় নিয়ে যাই।’
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোজাদাররা ইফতারে ৫০-১২০ গ্রাম পরিমাণের ছোলা, দুই-তিনটি পিঁয়াজো, এক-দুইটা বেগুনি, রায়তা, মুড়ির সঙ্গে অল্প পরিমাণে সুগার ফ্রি জিলাপি কিংবা পিঠা, জুসজাতীয় কিছু খেতে পারেন। ইফতারে বেশি ভারি কিছু খাওয়া মোটেই ঠিক নয়।